Change font size  -A  A  +A  ++A


মা বাবা কে বাদদিয়ে গুরু পূর্নিমা? পরিতাক্ত বয়স্কদের এখন ভরসা বাঙালি সমিতির সদস্যরা

@news5pm

July 9th, 2017

ব্যুরো রিপোর্ট /

ভাগলপুরের এক সময়ের এক নামী ডাক্তার আজ উত্যক্ত- দুই ছেলে এবং এক মেয়ে থাকা সত্তেও ঐ অসহায় মহিলা নিজের বোনের (তিনিও বয়স্কা) ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত. কিছু অসামাজিক লোক নিয়মিত ঐ ডাক্তার কে নানা ভাবে বিরক্ত করতে শুরু করেছে. উদ্দেশ্য মহিলা কে উত্ক্ত করে কোনো ভাবে এখান থেকে বিতারিত করে মহিলার বাড়ি দখল করার. স্থানীয় বিহার বাঙালি সমিতির তরফ থেকে শেষ পর্যন্ত মহিলার পাশে দাড়াবার নির্ণয় নেওয়া হয়েছে.

শান্তি দেবী (76), স্বামীর মৃত্যুর পর বিগত ৮বছর যাবত স্বামীর স্মৃতি এবং শশুরের 4 কাঠার উপর ভিটা আগলে ভাগলপুরের আছেন. কৃতি দুই ছেলে এবং বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়ে আজ অনেক দূর- মোবাইল মারফত ‘কেমন আছো .., কি করছো ইত্যাদি কথাবার্তা হয় কিন্তু শরীর খারাপ বা প্রয়োজনীয় কিছুর জন্য শান্তি দেবী কে চাকর বা পাশের প্রাতিবেশীর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়. বেশি কিছু  বাড়াবাড়ি হলে বাঙালি সমিতির ছেলেরা তো আছেই !

শুরুতে ছেলারা মা কে নিয়ে যাবার উদ্যোগ দেখিয়ে ছিলো কিন্তু ছেলেদের সংসারে আহেতুক নুতুনকরে ঝামেলা সৃষ্টি থেকে বাঁচবার জন্য যেতে চাননি. ছেলেরাও হাঁফ ছেড়ে ছিল, কমসে কম নিজেদের বউদের কাছে সারা জীবন মাথা উচু করে থাকার একটা চান্স (মাকে আলাদা করে ) হাতে এসে যাওয়াতে.

ঐ ডাক্তার মহিলা বা শান্তি দেবীর গল্প আজ এই জন্য প্রাসঙ্গিক কারণ আজ পুরো দেশে গুরু পূর্নিমার বেশ ঘটা  করে পালিত হচ্ছে. টিভি , নিউস পেপার ইত্যাদি তে সর্বত্য গুরু সম্পকে আদি পুরাতন ধর্ম গ্রন্থের মতামত অবলম্বনে ব্যাপক প্রচার প্রসার. এছাড়া আছে ফেস বুক / ব্হাত্সাপ্প যা সকলের হাতের স্মার্ট ফোনে সকাল থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে মনে করিয়ে দেয় গুরু পূর্নিমার মহাত্ম.  গুরু মানে শিক্ষক এবং মাতা পিতার- সম্পর্কে নানা উক্তি সহকারে কার কি করণীয় তার সঠিক বর্ণনা মিডিয়ার হেডলাইন এ.  ফেস বুক / ব্হাত্সাপ্প চিত্র সহ কারে বিভিন্ন্য মন্তব গুরুর সম্পকে.

কিন্তু দুখের বিষয় শান্তি দেবীদের  ব্যাপারে সবাই আজ চুপ- শান্তি দেবীরা  নিজেদের  সন্তানদের জন্য এক সময়ে গুরুর রোলে ছিলেন. মুঙ্গের এক মা হারা ছেলে যে বাইরে এক প্রতিষ্টত ব্যাঙ্কএ চাকুরিজীবি এবং বৌ বাচ্চা নিয়ে ঘোর সংসারী, বন্ধুদের সকাল থেকে ফলাও করে গুরু পূর্নিমার ম্যাসেজ পাঠাতে বাস্ত. এই ছেলেটির বয়স্ক রোগগ্রস্থ বাবা মুঙ্গেরে ছেলের মুখ চেয়ে বসে থাকেন যে কখন ছেলে তার কাছে আসবে!কিন্তু ছেলে কেও দোষ কি ভাবে দেওয়া যেতে পারে- 24 ঘন্টা বৌএর চোখ রাঙ্গানি আর মুখ ঝামটা শুনে শুনে ছেলেটিও যে এত দিন মোবাইল বা অন্য কোনো উপায়ে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে সেটার বিষয় কি বলা যেতে পারে?

বাঙালি সমাজে আজ শান্তি দেবীদের সংখা আজ অনেক বেশি (অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক মা বাবা বা স্ত্রী কে হারিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো একা কাটাচ্ছেন এমন অনকে বয়স্ক পুরুষ মানুষদের ও অবস্থা একই রখম). কার্যসুত্রে দুরে থাকায় এক অজুহাত সন্তানদের কাছে- যে মা বাবা সারা জীবন রাত দিন এক করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করে তারা যখন সেই ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে কোনোই কারণে একটা দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নিরুপায় হয়ে যান, সেই সব বয়স্ক মানুষদের ভেতরের হাহাকারের খবর কতজন শুনতে পায় বা বোঝার চেষ্টা করে  ?

 

‘গুরু ব্রম্হা…’, ‘পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম ….’ ‘মাতা পিতা জগতের প্রথম গুরু’ আমরা মোটামুটি ছোটবেলা থেকে শুনে অভ্যস্ত. আজ যখন চারিদিকে গুরু পূর্নিমার ধুম, নিজেদের জীবনে গুরুর মাহাত্ম কথা ভেসে উঠে. কিন্তু প্রশ্ন একটা – কত জন নিজের মা বাবা (জীবনের প্রথম গুরু) কে এই দিনে গুরু হিসাবে স্মরণ করে? মা বাবার প্রতি নিজেরা কতটা কর্তব্যপরায়ন সেটার হিসাব কি ভাবে করে?

এই কাহিনীর উপরক্ত নায়ক নায়িকাদের  এই রখম পরিনতি আজ প্রতি জায়গাতে খুব কমন. এটা ঠিক যে জীবন নির্বাহ করার তাগিদে ছেলে মেয়েদের দূর দেশে পাড়ি দিতে হয়, কোনো উপায় নেই তবে বিকল্প নিশ্চয় আছে. ভাগলপুরের মতো যায়গাতে ওল্ড এজ হোম নেই (বড় শহরে বৃদ্ধ মা/ বাবা কে ওল্ড এজ হোমএ চক্রান্ত করে পাঠাবার অনেক গল্প খুবই মর্মান্তিক)সেই কারণে এখানে এ রখম অসহায় বয়স্ক মানুষদের নিজেদের বাসস্থানেই থাকতে হয় যেটা সুরক্ষা এবং অন্যান কারণে নিরাপদ নয়.

বাঙালি সমিতির সক্রিয় সদস্যদের ঐ ডাক্তর মহিলার পাশে থাকার ঘটনা সত্যি আজকের তারিখে প্রশংসনীয় (মনে রাখা উচিত যে ভাগলপুরে বাঙালি যুবকদের দ্বারা মৃতদেহ সত্কার করার ইতিহাস বা কোনো পরিবারের দুর্দিনে পাশে এসে সকলে মাইল দাড়ানো খুব বিরল ). সমিতি যদি এই প্রকারের ঘটনার মোকাবিলা করার জন্য এক পরিকল্পনা তৈরী করে, তবে মনে হয় এ রখম সন্তান দ্বারা পরিতাক্ত বয়স্ক মানুষদের এখানে একটা হিল্লে হতে পারে. তবে ক্ষমতা সম্পন্ন সন্তানেরা যারা কোনো কারনে মা/ বাবা কে এখনে রেখে যেতে বাধ্য, তাদের এটা নিশ্চই নৈতিক দায়িত্ব যে ঐ বয়স্ক লোকেদের দেখাশুনার জন্য কিছু আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্তা করা.

বোধহয় এই ভাবে বাঙালি সমিতির এগিয়ে এলে এখানে গুরু পূর্নিমার সামাজিক সার্থকতা ( মা/ বাবা গুরু ন্যায় না মানার সন্তানদের জন্য পাপস্খলন করাও) পুরো করার শত প্রতিশত চান্স পাওয়া যেতে পারে.


2 Comments

  1. Debajyoti says:

    Osadharon. Khub bhalo lekha. Aaj poristhiti etai.

  2. Rajeev Banerjee says:

    গুরু পূর্ণিমায় প্রথম গুরু মাতা-পিতার স্মরণ বিরল দৃষ্টান্ত-স্থাপনের একটি সাধু-প্রচেষ্টা বলেই মনে করি. তবে সমাধানকে সমাজ-ভিত্তিক করে তুলতে যে ভাগীরথ প্রয়াসের প্রয়োযন, তা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয় সন্দেহ থেকে যাচ্ছে, কারণ পরিত্যক্ত মাতা-পিতারা তাদের সন্তান মোহ কাটিয়ে সমাজকে নিজ শুভাকাঙ্খী বলে বরণ করতে কতটা সক্ষম হবেন বলা যায়না. এ বিষয় সমিতি যদি বসে কথা বলার সুযোগ করে দেয় তো সুরাহা হতে পারে বলে মনে করি.

Leave a Reply to Rajeev Banerjee Cancel reply

Your email address will not be published.