Change font size -A A +A ++A
ব্যুরো রিপোর্ট/
অলোক রায় চৌধুরী, বাংলার চর্চিত সঙ্গীত শিল্পীর দ্বারা পরিবেশিত সংগীত অনুষ্ঠান গতকাল সন্ধায় ভাগলপুর দূর্গাবাড়ির প্রাঙ্গনে সংগীত প্রেমী বাঙালি শ্রোতাদের মধ্যে নিশ্চিত এক আলোড়ন সৃষ্ঠি করে. দূর্গাবাড়ির শতবার্ষিকী বর্ষ সমারোহ উজ্জাপন উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল. যদিও দর্শক সংখ্যা খুব বেশী হয় নাই তবে এই অনুষ্ঠান খুব সুন্দর ভাবে পরিবেশিত করা হয়.
ভাগলপুরে সাংস্কৃতিক গতিবিধির কেন্দ্র বিন্দু সদাসর্বদা এখানকার বাঙালি ছিল এবং থাকবে কিন্তু বাঙালির সংখা কম হতে থাকায়, এটা নিশ্চয় যে এখন সাংস্কৃতিক গতিবিধি প্রায় অস্তাচলগামী. হাতে গোনা কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানের যেমন দূর্গা পূজা, পয়লা বৈশাখ ইতাদি উপলক্ষ্যে গানবাজনার অনুষ্ঠিত হয় তবে বিগত কিছু বছর যাবত বাইরের শিল্পীদের আনার রেওয়াজ শুরু হয়েছে.
ভাগলপুরের পুরানো বাসিন্দা এবং অনেক লোক যারা ভাগলপুর থেকে আগে সব বিক্রিবাট্টা করে চলেগিয়ে এখন বাইরে থাকছেন, আক্ষেপ করে ভাগলপুরের সেইসব দিনগুলোর উপর. পূজাতে যাত্রা, থিয়েটার, গানবাজনা এবং সারা বছর কিছু না কিছু লেগেই থাকতো- এখানকার স্মৃতি চর্চায় এই কথা গুলো খুব কমন. ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় যে আজ থেকে প্রায় 100 বছর এর মধ্যে ভাগলপুরের বাঙালি যদি ব্রাম্হসমাজ বা অন্য কোনো ধার্মিক সুত্রে যুক্ত ছিল তো অন্য দিকে সংগীত সমাজের মত সংস্থান ও ছিল গানবাজনা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য.
সব চাইতে দুখ্যের বিষয় এই কে আগে স্থানীয় যুবক যুবতীদের সহভাগিতাতে এই সব অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হতো, নাটক যাত্রা থেকে শুরু করে গানবাজনাতে এনারা যুক্ত হতেন. ফলে ভাগলপুরের যে কোনো অনুষ্ঠানের এক বিশেষ পরিচয় ছিল. ষাট-সত্তর দশকএর মধ্যে থেকে নাটক যাত্রাতে বাইরের থেকে ফিমেল আর্টিস্ট আনার রেওয়াজ শুরু হয়. ভাগলপুরের কিছু কলাপ্রেমীর প্রচেষ্টায় শুরু হয় ত্রিপল এ নামক সর্ব ভারতীয় লঘু নাটক কমপিটিসন. বাইরে এটার খুব নাম হয় আর এতে অংশ গ্রহন করার জন্য বাইরে থেকে ভালো ভালো টীম আসা শুরু করে ছিল. কিন্তু এটিও বন্ধ হয়ে যায় খুব ছোট এবং সাধারণ কিছু কারণের জন্য- আজঅব্দি এটাকে পুনজীবিত করার কোনো চেষ্টা করা হয় নাই.
এটা ঠিক ভাগলপুরের ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালির বড় বড় স্বপ্ন দেখার অভ্যাস খুব বেশী আর সাথে সমালোচনা করার. কিন্তু সব চায়িতে বড় দুর্ভাগ্য যে আজ অব্দি এই শহরে শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়এর কোনো প্রতিমা কোনো পাবলিক প্লেসএ স্থাপনা করার কোনো চেষ্টা করা হয় নাই. বাইরের কোনো লোক ভাগলপুরে এলে জানা না থাকেলে এটা বুঝতে পারে না যে এই শহরে শরত ও থেকেছিলেন এক সময়ে এবং যুক্ত ছিল এর আনাচে-কানাচে. “কোথায় কেউ , পয়সা নেই, লোকবল নেই ….” এক কান্না বাঙালি সমাজের কার্ণধারেদের.
ঠিক এর বিপরীতে, গত দু বছর আগে, ভাগলপুর শাখার বিহার বাঙালি সমিতির সেক্রেটারি, নিরুপমকান্তি পাল এর প্রচেষ্টায় বাসন্তি পূজার সময় কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব সুন্দর নাটক করা হয়. এখানে এখন প্রতিভার কম নেই কিন্তু কমে গেছে প্রোচেস্টা. সমাজের কথা বলার লোক আছে, লোক নেই এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিয়ে কিছু করার.
দূর্গাবাড়ির কর্তা বিশিষ্টদের অনেক সাধুবাদ যে এইরকম এক আয়োজনের ব্যবস্তা করার সিদ্ধান্ত নেয়োর জন্য. কিন্তু এই শতবার্ষিকীর সূচীতে যুক্ত হওয়া উচিত ছিল এই রখম কিছু কাজ যেগুলো আজ হারিয়ে গেছে. মুষ্ঠিমেয় বাঙালির মধ্যে আজ একতা খুব জরুরী, দূর্গাবাড়ি, কালিবাড়ি, বাসন্তি পূজা কমিটি বা অনন্য গোষ্ঠীর উপস্থিতি ভালো কিন্তু সময় আজ বদলে গেছে, সমিতির প্রতি যুক্ত থাকা এবং সমিতির প্রতি সমর্পণ ভাবনা ভালো কিন্তু সমগ্র জাতির কল্যাণ সকলকে এক হতে হবে, একে অন্যের প্রতি মনোভাব বদলানো খুবই আবশ্যক. এই শহরে অনকে উদাহরণ আছে, মাড়বারি বা অনেক অবাঙালিদের মধ্যে যে একতা আছে সেটার সিকি ভাগ বাঙালিদের মধ্যে থাকলে আজ ভাগলপুরের চেহারা পাল্টে যেত.
সংহতি সব থেকে বড় শুধু নাটক যাত্রার জন্য নয়; ভুলে চলবে না যে ভাগলপুরে কত বাঙালি নিজেদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে, দুর্গাচরণ স্কুল দুটির আজ কি অবস্থা?
ভাল লেখা হয়েছে. তবে ভূতকালের সাথে বর্তমানের তুলনা করা কি সমীচীন? বিহার বাঙালী সমিতির “সংহতি ও সমন্বয়” কে রেখাঙ্কিত করার জন্য লেখক সাধুবাদের পাত্র, তবে বাস্তবে কি ভাবে তা ঘটিত হবে সে বিষয় কিছু স্পষ্ট ইংগিত দিলে সুবিধা হত. কোন সংদেহ নেই যে বেশ কিছুসংখ্যক বাঙালী সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও সমাজ হিসাবে আমাদের সুপ্রতিষ্ঠার প্রতীক আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্থাগুলি ও কার্য্যকলাপগুলি বেসিরভাগই আজ জনগণের ঔদাসিন্যের শিকার হয়ে মৃয়মাণ.
এবার কারণ ও সমাধানের দিকে আসা যাক. সময় পরিবর্তন ছাড়াও এই অবস্থার প্রধান কারণ সমাজে ভবিষ্যতদ্রষ্টা নেতৃত্বের অভাব, যার জন্য বরাবরই সংস্থাগুলির নেতৃত্ব-পরিবর্তন স্বাভাবিক ও সুস্থ ভাবে হয়ে ওঠেনি, ব্যক্তিপ্রাধান্যের কাছে প্রজাতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলি উপেক্ষিত হয়েছে ও নেতৃত্বের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলির কাছে সংস্থার ঘোষিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসকল পরাজিত হয়েছে. ফলে জনগণের মধ্যে সমাজের নেতৃত্বের প্রতি একটি সুক্ষ্ম নেতিবাচক ভাব ক্রমশঃ বলবতি হয়ে জেঁকে বসেছে আর স্বাভাবিকভাবেই তারা এসব ব্যাপার এড়িয়ে চলতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে বা একটা সুরক্ষিত দুরত্ব বজায় রাখতে আগ্রহী. সুতরাং এই অবস্থার উন্নতিসাধন পুরোপুরিই বর্তমান নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছে. তাদের প্রধান কাজ হল নম্র, নির্ভেজাল হয়ে নিরলস ভাবে জনগনের মনে সংস্থাগুলির প্রতি, তাদের ঘোষিত মহৎ উদ্দেশ্যগুলির প্রতি ইতিবাচক ভাবের সংচার করা যাতে জনসাধারণ আবার থেকে সক্রিয় সহভাগিতার জন্য প্রোরণা পায় ও এগিয়ে আসতে আগ্রহী হয়. আদর্শ নেতৃত্বের পরিভাষা দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ বলেছেন, ” It is very difficult task to take on the role of a leader. One must be a servant of servants and must accommodate a thousand minds. There must not be a shade of jealousy or selfishness, then you are a leader.” যতদিন না আমরা এই ধরনের নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারছি, নিরাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে. বারে-বারে বলতে হবে, “হ্যাঁ, আমরা পারব!”.