Change font size -A A +A ++A
ব্যুরো রিপোর্ট/
“ কাভি আলবিদা না কহনা… চলতে চলতে মেরে গীত যাদ রাখনা….” সত্তর দশকের কিশোরে কুমারের এই বিখ্যাত হিন্দি গান শুনলে মনে প্রশ্ন জাগে- ভাগলপুর কি সত্যি কিশোরে কে মনে রেখেছে? যদি রেখেছে তো কতটা ?
প্রশ্নটা খুব স্বাবাভিক, আজ কিশোরে কুমারের ৮৮ তম জন্মদিন- পুর বিশ্বে কিশোর প্রেমীরা ধুমধাম সহকারে এই বিশেষ দিনটা পালন করছে, আর আমরা এখনে…? যাক সনজিত দুবে কে অশেষ ধন্যবাদ, বিগত কিছু বছর যাবত উনি ভাগলপুরে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের মধ্যে কিশোরের জন্মদিন পালিত করে আসছেন. নিজেও কিশোরের গলাতে গান করেন এই ভদ্রলোক.
মামা বাড়ির সম্পর্খে অশোক কুমার, কিশোর কুমার দের জন্য ভাগলপুর ছিল খুব প্রিয়. গরমের ছুটিতে মা গৌরী দেবীর সঙ্গে ভাগলপুর আম খেতে আসা ছিল খুব কমন.
রাজা শিবচন্দ্র বেনার্জীর এক মাত্র সন্তান, কুমার সতীশ চন্দ্র (কুমার সাহেব)এর কন্যা ছিলেন গৌরী দেবী যার আদরের নাম ছিল লুনা. বাল্যকালে অশোক কুমার, কিশোরে কুমার, অনুপ কুমার এবং ভগ্নি সতীর ভাগলপুরের সাথে এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরী হয়ে উঠে প্রতি বছর আসা যাওয়াতে.
অশোক কুমার নিজের জীবনে অভিনয় করার সুযোগ পান এই ভাগলপুরে. বড় মামা শানু বাবুর গ্রুপ দ্বারা অভিনীত এক নাটকে যেটা ছোট দূর্গা চরণে অভিনীত হয়ে ছিল, বালক অশোক কুমার এতে একটি ছোট রোল পেয়ে ছিলেন জীবনের প্রথম. কথাশিল্পী শরত চন্দের ও দাদামশাই কুমার সতীশ চন্দ্রের তৈরী আমেচার ‘আদমপুর ক্লাব’ তখন প্রয্যন্ত জীবিত ছিল আর রীতিমত নাটক সঙ্গীত চর্চা হতো আদমপুর এলাকাতে.
অশোক কুমার কিশোর কুমার এর ভ্রাত্সপুত্রী, ড. রত্না মুখার্জীর ( মাসতুতো ভাই এবং প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক, অরুন কুমার মুখের্জীর পুত্রী)অনুসারে ১৯৪০ অব্দি অশোক কুমার কিশোরে কুমারের নিয়মিত ভাগলপুর আসতেন.
সেই সময় রাজা শিব চন্দ্রের রাজবাটির বিরাঠ অবস্থা, লোকজন, ভোগবিলাসিতা আর সঙ্গে নানান আচার অনুষ্ঠান. সাহিত্য এবং গানবাজনার চর্চা চলছে সোমানে- শানু বাবুর বিরাঠ দাপঠ আর কিন্তু এ সঙ্গে তিনি খুব রসিক এবং সাহিত্য এবং গানবাজনার প্রেমী.
ভাগলপুরের মাটি খুব উর্বর, অনেক জ্ঞানীগুনীরা এই মাটির থেকে নানান প্রেরণা পেয়ে নিজ নিজ জীবনে প্রতিষ্ঠত হয়েছেন এই ভাগলপুর থেকেই. অশোক, কিশোর খুব ছোট থেকেই ভাগলপুরে আসাযাবার ক্রমে এখানকার মাটি, জল, বাতাস ইত্যাদি থেকে অনেক প্রেরনা পান যেটা তাদের পরবর্তী জীবনে খুব কাজে লাগে. বিখ্যাত হিন্দি ছবি ‘পরোসান’ এ কিশোর নিজের বড় মামার, শানু বাবুর চরিত্র অবিকল নকল করে পুরো সিনেমা জগত এ হইচই লাগিয়ে দেন.
দুর্ভাগ্যক্রমে, সত্তর দশক এর পর কেমন যেন থিতিয়ে গেল ভাগলপুরের বাঙালিরা, ধীরে ধীরে একের পর এক বন্ধ হওয়া শুরু হয় নাটক যাত্রা গানবাজনা আর সাহিত্য চর্চা. আমাদের মধ্যে অনেকে ভুলে গেলেন অশোক কিশোর কে – নতুন প্রজন্মের কাছে এরা তুচ্ছ হয়ে গেল. আর এই কারণে এ প্রজন্ম সম্পূর্ণ রূপে বিছিন্ন হয়ে গেল ভাগলপুরের আবহমান কলা সংস্কৃতি থেকে- কোথায় সত্তর দশকের পর ভাগলপুরের কোনো নিবাসীর সেই রখম কোনো যোগদান দেখা যায় রাষ্ট্রীয় লেভেল এ ? হতে পারে জীবনের অন্যানো ক্ষেত্রে এখানকার অনেকই সুনাম অর্জন করেছেন কিন্তু তাদের সেই সুনামের সঙ্গে ভাগলপুরের সেই নাম যশের গন্ধ কোথায়? এটা সত্যি অদ্ভুত, কেন এখানকার নিবাসীরা হঠাৎ নিস্ক্রিয় হয়ে গেলেন? সম্প্রতি রাজবাটি বা অন্যানো বাঙালিদের প্রাচীন স্মৃতি সৌধ যখন স্থানীয় নিবাসীদের দখলে ধুলিস্মাত করা হয়, কেউ এগিয়ে আসেনাই এই স্মৃতি চিহ্নগুলোকে বাঁচাবার জন্য.
সম্প্রতি ভাগলপুরের দুই ইতিহাসকার, শিব শংকর সিংহ পারিজাত এবং ড. রমন সিনহা ফেসবুক মাধ্যমে ভাগলপুরের বাঙালিদের গৌরবময় ইতিহাস নিজেদের লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেন. ওনাদের উদ্দেশ ছিল যে এখানকার বাঙালিরা এগিয়ে এসে সমাজের হাল ধরুক, কিন্তু এত লিখেও বোধহয় ওনারা এখানকার বাঙালিদের ঘুম থেকে তুলতে পারলেননা.
আমরা করতে পারি অনেক কিছু যেটা আগে ভাগলপুরে হতো কিন্তু করিনা বা করার চেষ্টা করিনা. ধর্মের নামে বাঙালি কে একজোট করার কিছু সংঘটন খুব প্রচলিত হয়ে উঠেছে. ভালো কথা কিন্তু ধর্মের সাথে সাথে বাঙালিদের আস্তিত্য রক্ষা করা কি ভাবে হতে পারে সেটার ও চেষ্টা করা উচিত. না হলে কালকের প্রজন্মের কাছে আমরা কেউ মুখ দেখাবার মত থাকবনা.
Leave a Reply